মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক জরুরি সভা আহ্বান করেন। সভায় অধিদপ্তরের পরিচালক, প্রকল্প পরিচালক ও উপপরিচালকদের সবাইকে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে ওই সভায় উপস্থিত থাকার আগাম নির্দেশ দেন তিনি। মৌখিক নোটিশে এই জরুরি সভাটি আহ্বান করা হয়। তবে সভাটি কীসের বা কী কারণে এ সভা আহ্বান করা হয়েছে এ ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। সভাটি হয় মাউশির কনফারেন্স রুমে, যেখানে সাধারণত মন্ত্রী/ উপদেষ্টা বা সচিব এলে সভা করে থাকেন। সভাটি ডাকা হলো ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০টায়। ঠিক ১০টায় কনফারেন্স রুমে ঢোকেন কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। ডিজি ড. আজাদ খান হন্তদন্ত হয়ে তাকে রিসিভ করেন। ডিজির চেয়ারের পাশে উপদেষ্টার চেয়ারে বসান। এতে উপস্থিত কর্মকর্তারা সবাই হতবাক হন। তারা বুঝতে পারেন যে, ফরহাদ মজহারের জন্যই এই জরুরি সভাটির আয়োজন করা হয়েছে।
তারা অবাক হন প্রথমত, ফরহাদ মজহার সরকারের কেউ নন। অথচ তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অত্যাবশ্যকীয় জরুরি সভা আহ্বানের নজির অতীতে নেই। কখনো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি, দেখেও-নি, শুনেনও-নি কেউ। দ্বিতীয়ত, ফরহাদ মজহারকে ডিজি বসালেন সরাসরি উপদেষ্টার চেয়ারে।
অবশ্য, কর্মকর্তাদের জন্য অবাক করার বিষয় আরো ছিল। তা হলো, ফরহাদ মজহার এ ধরনের সরকারি কোনো ক্ষমতাপ্রাপ্ত নন, তিনি সরকারের অন্য কোথাও কোনো পদে নেই তারপরও উপস্থিত কর্মকর্তাদের একে একে সবার কার কী কাজ জানতে চাইলেন। কাজের জবাবদিহি করলেন এবং নির্দেশনাও দিলেন। এমন পরিস্থিতিতে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অত্যন্ত বিব্রতবোধ করেন। একজন পরিচালক (পরিচালক, মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন) বৈঠক থেকে উঠে চলে যান। কেউ কেউ অবশ্য সভাটি উপভোগও করেন। আবার দু’একজন এই সভা থেকে নিজেদের সুবিধাও আদায় করার চেষ্টা চালান। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রকল্প নামে পরিচিত ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম এন্ড নিউরো প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক নুরুল আলম অনুরোধ জানান, ফরহাদ মজহার যেন এ প্রকল্পটি চালু রাখার ব্যাপারে সরকারের নিকট সুপারিশ করেন। এ সময় উপস্থিত অধ্যাপক সালমা বেগম প্রকল্পটির প্রশংসা করে বলেন, ইতিপূর্বে তিনি এ প্রকল্পের পিডি ছিলেন। তার হাতেই গড় এ প্রকল্পটি। পুতুলের এ প্রকল্পটি চালু রাখার ব্যাপারে তিনি সমর্থন জানান।
জানা যায়, আগের দিন অর্থাৎ ৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার সময় হঠাৎ জরুরিভাবে মৌখিক নোটিশে এ সভাটি আহ্বান করা হয়। মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান নিজে ফোন করে এ সভায় উপস্থিত থাকার জন্য বলেন। অন্য কোনো কাজ অথবা সভা থাকলে সেটি স্থগিত করে এ সভায় উপস্থিত থাকতে বলেন ডিজি। কিন্তু তিনি সভার বিষয় সম্পর্কে কিছুই বলেননি। জিজ্ঞাসার জবাবে শুধু জানান, জরুরি বিষয় আছে। পরের দিন সকাল সাড়ে নয়টায় প্রত্যেককে ডিজির দপ্তর থেকে ফোন করে সভার কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়। সকাল ১০ টার মধ্যে পরিচালক, উপপরিচালক, প্রকল্প পরিচালকরা সভাস্থলে উপস্থিত হলেন। তখনও ডিজি ড. আজাদ খান সভার বিষয় সম্পর্কে প্রশ্নের জবাব দিলেন না। তিনি শুধু বললেন, দুই মিনিট পরেই দেখতে পাবেন। আর সেই দুই মিনিট পরে সভাস্থলে হাজির হলেন ফরহাদ মজহার। একই সঙ্গে সভায় আরো একজন ব্যক্তি উপস্থিত হন। তিনি হলেন সাত কলেজের প্রশাসক অধ্যাপক একেএম ইলিয়াস। যদিও মাউশির কাজের সঙ্গে তার কোনই সংশ্লিষ্টতা নেই এবং তিনি এ সভায় উপস্থিত থাকারও কথা নয়। উল্লেখ্য, অধ্যাপক আজাদ খান এবং একেএম ইলিয়াস উভয়েই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হিসেবে চিহ্নিত।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “৩১ বছরের চাকরি জীবনে কখনো দেখিনি, বাইরের কোন লোক একটি অধিদপ্তরের সকল পরিচালক, উপপরিচালক, প্রকল্প পরিচালকদের কনফারেন্স রুমে ডেকে তাদের কার্যকলাপ নিয়ে জবাবদিহি করার ঘটনা এবং নির্দেশনা দেয়া। আমরা সবাই বিব্রত ও অপমানিত বোধ করছি।”
Add comment