TTB- Voice of Nation

ঢামেক হাসপাতাল: ডিডি-প্রশাসনিক কর্মকর্তার দুর্নীতি তদন্ত করছে দুদক

মুনিরুল তারেক:

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (ঢামেকহা) বিভিন্ন কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সূত্র জানিয়েছে, অনুসন্ধানে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। তবে, অভিযুক্তরা বিভিন্ন মহল দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজের চেষ্টা করছে, যেন মামলা পর্যন্ত বিষয়টি না গড়ায়।

এদিকে, এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে দুদকের তদন্তের মুখোমুখি হওয়া ঢামেক হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান বলেছেন, হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলছে বলে জানা নেই। আর হয়ে থাকলেও তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে দুদকে একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। তাতে উল্লেখ আছে, ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন সংস্কার মূলক কাজের নামে লুটপাট হয়েছে। যেমন-পুরাতন ভবন ভাঙ্গার পরিকল্পনা আছে, তারপর ঐ ভবনে টাইলস লাগানো সিলিং লাগানো ও দরজা পাল্টানোসহ কাজ করা অপ্রয়োজনীয় খরচের নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। খুচরা কেনাকাটা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের নামে অর্থ লুটপাট করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে আরো উল্লেখ আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্টিন, ওষুধের দোকান ভাড়া বেশি নিয়ে সরকারি কোষাগারে কম টাকা জমা দেওয়া হয়। যেমন-নার্সিং ক্যান্টিন ভাড়া দেয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তৃতীয় শ্রেণীর ক্যান্টিন দেড় লাখ টাকা, নতুন ভবনের ক্যান্টিন ২ লাখ টাকা আদায় করা হয়। অথচ সরকারি কোষাগারে টাকা জমা হয় কম।

আরেকটি গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে হাসপাতালের এটেনডেন্ট কার্ড তৈরিতে দুর্নীতি। দুদকে দেয়া লিখিত অভিযোগের সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে কার্ড তৈরিতে ঠিকাদারকে দেয়া ক্রয় আদেশ যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। যাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাসার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নাম প্রতিষ্ঠানকে প্রতি পিস ৮২ টাকা দরে ১০ হাজার পিস কার্ড সরবরাহের আদেশ দেয়া হয়। সেসব কার্ড আবার মেশিন রিডেবল ম্যাগনেটিক চিপযুক্ত থাকার কথা। তবে বাস্তবে এ ধরনের কোনো ঢামেক হাসপাতালের কোথাও ব্যবহৃত হয়নি কখনও। রোগীর এটেনডেন্টদের দেয়া কার্ড শুধুমাত্র কাগজে ছাপিয়ে লেমিনেশন করা। এই খাতে ব্যাপক হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।

এছাড়া, বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের নামে অর্থ লুটপাট, যেমন চিকিৎসা গবেষণা ট্রেনিং না করেই লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিংয়ে একই ব্যক্তিকে একাধিক নাম দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তারপর ট্রেনিংয়ে ব্যাগ না দিয়ে শুধু প্যাড খাতা, কলম দিয়ে ট্রেনিং শেষ করা হয়। গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সের যন্ত্রপাতি কেনাকাটার নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। বাগান সাজানোর নামে অর্থ লুটপাট, ফুলগাছের দাম বেশি দেখানো হয়। ইনজেকশন লেভোফেড (৪ মি.গ্রা.) কোম্পানী থেকে না নিয়ে ডিলারের মাধ্যমে বেশি দামে ক্রয় করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ। খুচরা মালামাল কিনলেও কমিশন থাকে। ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে খাবারের আপ্যায়নের নামে টাকা আত্মসাৎ অভিযোগও আছে। তখন ২২০ টাকার শাহী মোরগ পোলাও খাবার দিয়ে প্রতি প্যাকেট দাম দরা হয় ৩৬০ টাকা।

এর বাইরে, বিভিন্ন ব্যানার বোর্ড বানানো ও খুচরা কেনাকাটায় দোকান থেকে ২টি করে ক্যাশমেমো সংগ্রহ করে একটি ব্ল্যাঙ্ক মেমো সংগ্রহ করে ওই মেমো দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, এসব অর্থ আত্মসাত কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হলেন উপ-পরিচালক (সাবেক সহকারী পরিচালক) ডা. আশরাফুল আলম, অফিস সহকারী আবুল হোসেন, ক্যাশিয়ার আলমগীর, ডে লেভার ডালিম। তবে, দুদক সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনেক দুর্নীতির সঙ্গে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেজাউল ইসলামের নামও পাওয়া গেছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে উপ-পরিচালক আশরাফুল আলমের দপ্তরে গেলে সাক্ষাৎ দেবেন বলে ঘন্টাখানেক বসিয়ে রেখে পরে জানিয়ে এ বিষয়ে কথা বলবেন না। পরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেজাউল ইসলামের কক্ষে গেলে তিনি পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

সার্বিক বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ভাঙার সিদ্ধান্ত হওয়া ভবনে টাইলস লাগানোর যে অভিযোগ করা হয়েছে, এতে বাস্তবতা হচ্ছে- ভাঙার আগ পর্যন্ত ভবনটি রোগীদের সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে। সুতরাং এটিকে ব্যবহার উপযোগী করে রাখতে হবে যতক্ষণ সেখানে রোগী আছে। আর দুদকে যদি অভিযোগ গিয়ে থাকে তারা স্বাধীনভাবে তদন্ত করে দেখবে, এ নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.