টিটিবি রিপোর্ট:
ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) কার্যালয়টি এখন অনিয়ম, দুর্নীতি আর দালালদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সরকারি এই সেবা প্রতিষ্ঠানটি জিম্মি হয়ে পড়েছে সহকারী পরিচালক (এডি) মামুন এবং মোটরযান পরিদর্শক নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন এক শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা থেকে শুরু করে ফিটনেস প্রদান—সবক্ষেত্রেই চলছে প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য। টাকা না দিলে নড়ে না কোনো ফাইল, পাস হয় না কোনো পরীক্ষা।

সরেজমিনে অনুসন্ধান ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইকুরিয়া বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়াটি এখন সম্পূর্ণ দালাল নির্ভর। অভিযোগ রয়েছে, সহকারী পরিচালক মামুন ও পরিদর্শক নজরুল ইসলাম সাধারণ নিয়মে পরীক্ষা দিতে আসা প্রার্থীদের পরিকল্পিতভাবে ‘ফেল’ করিয়ে দেন। প্রার্থী যতই দক্ষ চালক হোন না কেন, দালাল না ধরলে বা ঘুষের টাকা না দিলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া অসম্ভব। অন্যদিকে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অংকের টাকা জমা দিলে গাড়ি না চালিয়েও পরীক্ষায় পাসের নিশ্চয়তা মিলছে।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, এই অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধে যেসব চিহ্নিত দালালের ছবি সম্বলিত সতর্কীকরণ ব্যানার টানানো আছে, তারাই এখন অফিসের ভেতরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ কর্তৃক একাধিকবার আটক এবং বিআরটিএর তালিকায় ‘কালো তালিকাভুক্ত’ এসব দালালদের পুনর্বাসিত করেছেন খোদ পরিদর্শক নজরুল ইসলাম। তারা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নজরুলকে যে-ই রোল পাঠায়, তারা পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও পাশ হয়ে যান।
ওই দালাল চক্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হচ্ছে আমজাদ হোসেন, মনির হোসেন, মাসুদ হোসেন, মিজিন মিয়া, মান্নান, সহ আরো অনেক কয়েকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, পরিদর্শক নজরুল ইসলাম এক অভিনব পন্থায় এসব চিহ্নিত দালালদের অফিসে প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছেন। ড্রাইভিং স্কুলের ‘ট্রেনিং কার’-এ করে এসব দালালদের তিনি বিআরটিএ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করান, যাতে সাধারণ মানুষের বা নিরাপত্তারক্ষীদের নজরে না পড়ে। এভাবেই নজরুলের প্রত্যক্ষ মদদে দালালরা পরীক্ষাকেন্দ্র ও ফিটনেস সেকশন নিয়ন্ত্রণ করছে।
সেবা নিতে আসা এক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি নিজের গাড়ি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম, সব সঠিক থাকার পরও আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে। অথচ আমার চোখের সামনে দালালের মাধ্যমে আসা এক ব্যক্তি গাড়ি স্টার্ট না দিয়েই পাস করে গেল। এখানে এডি মামুন আর ইন্সপেক্টর নজরুলের টাকা ছাড়া কোনো ন্যায়বিচার নেই।”
সহকারী পরিচালক (এডি) মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দাপ্তরিক ফাইলে সই করতেও তিনি দালালদের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণ করেন। দালাল ছাড়া সরাসরি কোনো ফাইল তার টেবিলে গেলে দিনের পর দিন তা আটকে থাকে।
স্থানীয় সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীরা বলছেন, চিহ্নিত দালালদের প্রশ্রয় দেওয়া এবং সরকারি দায়িত্বের অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। তারা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে এডি মামুন ও পরিদর্শক নজরুলের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।


Add comment